ছোটবেলা থেকে ক্যাডার সার্ভিসের প্রতি বাবার আগ্রহ ও উৎসাহের কথা শুনে বড় হয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখে যখন এ সম্পর্কে আরও জানলাম, তখন আমার ভেতরেও বিসিএস, বিশেষ করে পররাষ্ট্র ক্যাডার হওয়ার প্রতি একধরনের আকর্ষণ কাজ করতে শুরু করল। যদিও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ছাত্র হিসেবে তখনো এই আত্মবিশ্বাস পাইনি যে আমার দ্বারা বিসিএস সম্ভব। কারণ সবাই বলত, একাডেমিক রেজাল্ট ভালো করলেই বিসিএসে ভালো করা যায় না।
গাজীপুর কাওরাইদ কেএন উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক আর ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক—দুটো পরীক্ষাতেই জিপিএ ৫ পেয়েছি। স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে মাইক্রোবায়োলজিতে আমার সিজিপিএ ছিল সর্বোচ্চ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো ফলের জন্য প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পেয়েছি, ডিন’স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। তবু আর সবার মতো বিসিএস নিয়ে দ্বিধা কাজ করেছে আমার মধ্যেও। ভেবেছি, আমি কি পারব?
স্বপ্ন হলো সত্যি
৩৭তম বিসিএসের বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর বন্ধুদের দেখাদেখি আমিও আবেদন করলাম। উদ্দেশ্য ছিল, প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দিয়ে আদতে নিজেকে পরীক্ষা করা। স্নাতকোত্তরের থিসিস যখন জমা দিয়ে দিলাম, প্রিলির আর দুই মাস বাকি। ভাবলাম, সময় নষ্ট না করে জোর প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি।
প্রিলিতে উত্তীর্ণ হওয়াটাই বোধ হয় আমার জন্য টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে কাজ করেছে। নইলে হয়তো ধরেই নিতাম, বিসিএস আমাকে দিয়ে হবে না। যাহোক, আত্মবিশ্বাস পুঁজি করে নতুন উৎসাহে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিলাম। পরীক্ষা ভালোই হলো। ভাইবা ভালো হওয়ার পর, ভালো ক্যাডার পাব সেই প্রত্যাশা জন্মেছিল। কিন্তু পররাষ্ট্রে প্রথম হয়ে যাব, সত্যি বলতে এতটাও আশা করিনি! এটাই আমার প্রথম বিসিএস, তার ওপর কোথাও কোচিং করিনি। অন্যদের সঙ্গে আমার প্রস্তুতি ও সামর্থ্যের পার্থক্য কতটুকু, সে সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না। তবু আল্লাহর রহমতে প্রথম হয়েছি।
এখন মা-বাবা-স্বজনেরা খুব খুশি। আমার ওপর সবার আস্থা দেখে সত্যিই অবাক হয়েছি। সবাই নাকি আগেই জানত, আমার পররাষ্ট্র ক্যাডারে হবে। বন্ধুবান্ধবেরা অভিনন্দন জানাচ্ছে, অনেকে আবার ‘ট্রিট’ চাইছে। এ এক মধুর যন্ত্রণা!